রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৩৬ পূর্বাহ্ন

‘কোটা থাকায় মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে’

একুশের কণ্ঠ অনলাইন:: কোটা ব্যবস্থার সুবিধা নেওয়ার কথা ভেবে আমরা মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। যুদ্ধ করেছি দেশের জন্য, দেশ স্বাধীন হয়েছে। মুক্ত স্বাধীন দেশটি দেখতে পেয়েছি, ভালো লাগে। অনেক মুক্তিযোদ্ধা তো শহীদ হয়েছেন, স্বাধীন দেশটিও দেখতে পারেন নি। মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান প্রাপ্য, তা তাদের দেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বীরপ্রতীক খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. জে. হারুন-অর-রশিদ (অব.)।

তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা এখন ষাট-সত্তর ঊর্ধ্বে। তাদের আর এখন চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই। যে সুযোগ-সুবিধার অভাব ছিল স্বাধীনতার সময় সেটা এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে গেছে। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা তো সবাই চাকরি করবে না। ব্যবসা করবে, কেউ কেউ হবে উদ্যোক্তা। চাকরির ক্ষেত্রে কোটা দিতে পারলেও সব ক্ষেত্রে তো আর কোটা দেওয়া যাবে না। সবাই সমান সুযোগ দিয়ে তাকে গড়ে তোলেন। তারপর ছেড়ে দিন।

তিনি আরও বলেন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কোটা বাতিলের বিরোধিতার কারণ বিশ্লেষণ করব। তবে আমরা একটি প্রশ্ন বা জানার বিষয় আছে, এই কোটা ব্যবস্থার কারণে কত শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান লাভবান হয়েছেন? এ সংক্রান্ত কোনো পরিসংখ্যান কী আছে? কারও কাছে বলে আমার মনে হয় না। আমার ব্যক্তিগত মত, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থার অপব্যবহার হচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা কোটার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার যে প্রতিযোগিতা এখন শুরু হয়েছে তাতে প্রতিনিয়ত, প্রতিদিনই মুক্তিযোদ্ধা তৈরি হচ্ছে। এমনটি হওয়ার কথা নয়। কারণ মুক্তিযুদ্ধ পরিসমাপ্তি ঘটেছে ছেঁচল্লিশ বছর আগে। সরকারি চাকরিতে কোটা থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তা থেকে উত্তরণে সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। তবে প্রধানমন্ত্রীর কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণা যুগান্তকারী ও সাহসী পদক্ষেপ বলে আমি মনে করি।

এক প্রশ্নের জবাবে এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, কোটা ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল একটা বিশেষ লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য নিয়ে। সেটা কী? আমরা জানি, মুক্তিযুদ্ধে শতকরা পঁচাশি ভাগ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলের। গ্রাম অঞ্চল ও শহরাঞ্চলের সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অনেক পার্থক্য ছিল। এ কারণে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা শহরাঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে পারত না। এজন্য কোটা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে বলা হয়েছিল যে, শতকরা ৩০ শতাংশ কোটা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জীবনমান উন্নত করা হবে। সেটাই তখন বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, বাহাত্তর থেকে আঠার- ছেঁচল্লিশ বছরে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিবর্তন উল্লেখযোগ্য। ধরুন, তখন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ৫টি, এখন প্রায় একশ। শিক্ষা বিস্তারের জন্য যে সমস্ত প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন তা এখন জেলা শহর বা উপজেলা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। তিনি আরও বলেন, রাষ্ট্র পরিচালনায় একটি দক্ষ, মেবাধী ও চৌকষ প্রশাসন প্রয়োজন। সেখানে মেধার ক্ষেত্রে যদি আমরা আপোস করি তাহলে একটা সময় আসবে যখন রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষমতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। এ বিষয়টি সামনে রেখে উইন উইন সিচুয়েশনের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে লে. জে. (অব.) হারুন-অর-রশিদ বলেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিলের ঘোষণাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কিছু পরিসংখ্যান উল্লেখ করেছিলেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে শতকরা সত্তর থেকে একাত্তর শতাংশ মেধায় নিয়োগ পাচ্ছে, ত্রিশ শতাংশ আসছে কোটা ব্যবস্থায়। ৫৬ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ কোটা ব্যবস্থা থেকে নিয়োগ পাচ্ছে। তার মানে কী যে সিস্টেম রয়েছে তা অকেজো হয়ে গেছে। পরিসংখ্যান মতে কী দাঁড়াচ্ছে? যে উদ্দেশ্য নিয়ে কোটা ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছিল তা অনেকাংশেই সফল হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com